

কেন টেক জায়ান্ট, গুগোল ছেড়েছিল চিন?
ধরুন,আপনি প্রধান নির্বাহী কর্তা ছিলেন কোন বিখ্যাত প্রযুক্তিনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। আপনার এই প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু পণ্য বা সেবা উৎপাদন করতে পারে ।যেগুলো পৃথিবীর যেকোন দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে। আপনার প্রতিষ্ঠান বিদেশেও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারে দেশের বাজার ছেরেও ভালো মানের পণ্য উৎপাদনেজন্য। অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য হাজার হাজার পদ আপনার সামনে খোলা আছে বিশ্বায়নের যুগে।
এখন কথা হচ্ছে, অন্যান্য দেশে আপনার প্রতিষ্ঠানকে জনপ্রিয়তা লাভ করার জন্য কোন দিকটি তুলে ধরবেন আপনি? বাজার হয়েছে আপনার এই প্রশ্নের সহজ উত্তর। আপনার প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সামগ্রী যদি ভাল মানের না হয়ে থাকে তাহলে বাইরের দেশের বাজারের কথাতো দুরের কথা ,নিজ দেশের বাজারে বা জনগণের কাছে আপনি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবেন না এবং প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।
আরেকটা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে ত এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বিশাল অংকের মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হবে যদি চীন নিজ দেশের জনগণের মধ্যে প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ সম্ভব ওই মুনাফা দিয়ে।
গুগল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ল্যারি পেইজ এবং সেগেই বিনের হাত ধরে চীনের বাজারে প্রথমে এসে খুব একটা প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। গুগোল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে ।সার্চ ইঞ্জিন বাইডুর যাত্রা শুরু করে চীনের দুই বিজ্ঞানী হলেন এরিক জু এবং রবিন লি। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনের তৈরি প্রযুক্তি সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার লাভ করতে থাকে আমেরিকা থেকেও।
একটা মজার বিষয় হলো যে গুগল এবং বাইডু চীনের বাজারে মুখোমুখি হলেও চীনের তৈরি সার্চ ইঞ্জিন কিন্তু বাইডুর মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করে। মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলারে বাইডুর আড়াই শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছিল শুরুর দিকে। ৬০ মিলিয়ন ডলারে সেই শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিল সিনের সার্চ ইঞ্জিন আসার অল্প সময় আগে। চীনের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন এবং গুগোল বাজারে আসে ২০০৬ সালে।
গুগলের চীনা সার্চ ইঞ্জিনে বড় ধরনের সাইবার অ্যাটাক পরিচালনা করা হয় ২০১০ সালের দিকে। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আক্রমণ পরিচালনা করেন গুগলের। পরে জানা যায় যে চীনের জনগণ গুগলের এই আক্রমণ করেছিল এবং হ্যাক করার চেষ্টা করেছিল। চীনা সরকারের সাথে গুগলের অনেক বড় একটা ঝামেলা সৃষ্টি হয় তখন। গুগলের সার্চকৃত ফলাফলের ওপর সেন্সরশিপ আরোপ করে চীনা সরকার যে কোন বিরুদ্ধমত কিংবা বাইরের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সন্তুষ্ট করতে পারেনি গুগলের কর্তাব্যক্তিদের এই কথা। চীনের সরকার শুধু গুগলের সাথেয় নয় বাইডুরের সাথেও ঝামেলা করেছিল।
চীন অন্যতম দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল পৃথিবীতে যে কটি দেশ সাইবার হ্যাকার করে তাদের মধ্যে। পুরো বিশ্বজুড়েই চীনা হ্যাকারদের কুখ্যাতি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে পরাশক্তি হওয়া আগে জরুরী বৈশ্বিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে । অর্থনীতির স্থিতিশীলতা একটা বড় শত অর্থনৈতিক বাজারটা ঠিক থাকার জন্য। রাজনৈতিক দলের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হোক তা কখনো চায় না চিনার একদল মানুষ।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা মুক্ত করার পদ্ধতি গ্রহণ করলেও রাজনৈতিকভাবে তারা কখনোই কমিউনিস্ট পার্টি সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সাহস পায় না। চীনের দেশের হ্যাকাররা নিজ দেশের সম্পত্তি হ্যাক করা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে। চীনা হ্যাকারদের সাইবার অ্যাটাক ক্যাম্পেইনের অংশ ছিল চীনা মানবাধিকার কর্মীদের জিমেইল তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার কাজে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
চীনের গুগোলের অনেক কষ্ট করতে হয়েছি বাইডুর সাথে পেরে উঠতে। চীনা সামাজিক গুরুত্ব হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্ব তথ্য রেখেছিল চীনা জনগণ আর বাইডুর পেছনে তাদের হাত ছিল। ২০০ টি শহরে ই-কমার্স এর ধারণা নিয়ে হাজির হয় বাইডুর ২০০৫ সালের দিকে। অথচ গুগলের কোন চিন্তা ধারা ছিল না ওই সময়। প্রথমদিকে গুগোল সিলিকন ভ্যালির সে প্রযুক্তিবিদদের ওপর নির্ভরশীল ছিল যারা সিনা সার্চ ইঞ্জিনের কাজ করছিল।
প্রথমদিকে গুগল থেকে খুব বেশি সুবিধা পায়নি চীনা নেটিজেনরা। পরে চীনের অনেক দক্ষ কর্মী কে নিয়োগ করা হয়েছিল এই কাজে যারা মান্দারিন ভাষায় কোডিং এর দক্ষতা ছিল অনেক বেশি। চীনের বর্তমান বাজার অনেক ভালো আছে যদিও বাইডু সাথে পেরে উঠতে পারেনি কখনো। সাইবার অ্যাটাকের দিক থেকে চীন সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসা করা খুব সহজ ব্যাপার নয় চিনে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা খুবই কঠিন কমিউনিস্ট পার্টির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে। গুগলের প্রস্তান দেওয়া হয় চিনা বাজার থেকে কারণ চীন দেশে ব্যবসা করতে গেলে চীনের নিয়ম নীতির মধ্যে ব্যবসা করতে হবে তা না হলে চলে যাও।