ঘটনাবহুল মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-1968


মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
১৯৬০ এর দশকের সময়কার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনজীবন ছিলো খুন,দাঙ্গা,রাহাজানি আর সরকারবিরোধী আন্দোলনে জর্জরিত।কৃষ্ণাঙ্গ আন্দোলনের ভিতর দিয়ে শুরু হওয়া দশকটি শেষ হয়েছিলো ভিয়েতনামে মার্কিন যুদ্ধোবিরোধী আন্দোলনের ভিতর দিয়ে.১৯৬০ এর মাঝা মাঝি সময়েও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের প্রভাব ছিলো বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।কারন তখনই নাগরিকদের মাঝে সরকার বিরোধী মনোভাব সৃষ্ট হয়েছিল।ছোট ছোট দাঙ্গা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা।এরই মধ্যে ভিয়েত্নাম যুদ্ধে যুক্তরাস্ত্রের সশস্ত্র অংশগ্রহন ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক কাঠামো নাড়িয়ে দিয়েছিলো।দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সহ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরে ভিয়েতনাম।
১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে এসে ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশগ্রহন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পরে।যুবকদের যুদ্ধে যোগদানে প্ররোচিত করাসহ নানা কারণে যুব-বিদ্রোহ গড়ে উঠেছিলো শহরগুলোতে।১৯৬৭ সালে নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জারসিতে এক দাঙ্গাই ২৬ জন যুবক নিহত হওয়ার একটি ঘটনা ঘটে।এই অবস্থাই মার্কিন প্রেসিডেন্ড নির্বাচন সময় যতই ঘনিয়ে আসছিলো,দেশের সার্বিক অবস্থা আরো বেশি খারাপ হয়ে উঠছিলো।ঐ সময় ক্ষমতার পালাবদলই মার্কিন নাগরিকদের ভাগ্য পাল্টাতে পারতো বলে মনে করতেন সেই সময়কার সাংবাদিক মহল। এই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদগুলো ছাপানো হতো তখনকার সংবাদপত্রের প্রথম পাতাই।
হোয়াইট হাইজে তখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বায়িক্ত পালন করছিলেন ডেমোক্রেট দলের নেতা লিন্ডন বি.জনসন।নিউ ইউর্ক টাইমের সূত্রমতে,১৯৬৮ সালের শুরুর দিকে বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক মনে করতেন যে,রিপাবলিক দলের নেতা নেনসন রকফেলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ভিয়েতনাম যুদ্ধো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে আনতে পারবেন।এমন অনেক ডেমোক্রেট সমর্থকও এই যুক্তিতে বিশ্বাষ করতেন।রকফেলার তখন নিউ ইয়র্কের গভর্নর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।যদিও রিপাবলিকানরা কাকে তাদের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দিবেন সেটা নিয়ে বির্তক চলছিল দীর্ঘদিন ধরে।কারণ রকফেলার ছাড়াও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং ক্যালাফোর্নিয়ার গভর্নর রোনাল্ড মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ড নির্বাচন-এর জন্য।
রিপাবলিকানদেরর দিকে মুখিয়ে থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরর অধিকাংশ নাগরিকের জন্য ১৯৬৮ সালের নির্বাচনের বছরটি ছিলো দারুণ ভাবে স্মরণীয়।কারণ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ণ,কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধি বা জাতীয় নিরাপত্তার মতো বিষয় সেইবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-এ ভোটের পার্থক্যে প্রভাব ফেলত।শুধুমাত্র ভিয়েতনামের যুদ্ধো বন্ধো এবং নাগরিক নাগরিক অধিকারের আইনগুলো বাস্তবায়ন করাই ছিলো বেশির ভাগ রিপাবলিকানদের চাওয়া।দেশের যুবক সমাজ এই দুইটি বিষয়ের পক্ষে ছিলো।যার কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে যে উত্তেজনা এবং আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো সেটি এখন অবধি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আলোচিত হয়।মূলত আসলে এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মধ্যে দিয়ে মার্কিনিরা তাদের দেশের নীতিগত ভবিষ্যৎ অনেকটাই পাল্টে দিয়েছিলো।আজ আমরা আলোচনা করবো ১৯৬৮ সালের সেই আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে।
রিপাবলিকান মনোনয়ন নিয়ে গুঞ্জন


মনোনয়ন চূড়ান্ত করার শেষ সময়ে ডেমোক্রেটরা দলের ভিতরের অভ্যন্তরীন কোন্দল ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নমত অপসারণে ব্যস্ত সময় পার করছিল।পত্র পত্রিকাসহ জন মানুষের মাঝে উৎসাহ কাজ করছিলো রিপাবলিকান প্রার্থীদের নিয়ে।কারণ ডেমোক্রেটদের কারণে ভিয়েতনামে যে গণহত্যা শুরু হয়েছিলো তা বন্ধের জন্য মার্কিন নাগরিকদের একাংশ আরো একবার ডেমোক্রেট মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে মোটেও রাজি ছিলেন না।হয়তো এই কারণেই দলে প্রার্থীতা নিয়ে এত ব্যপক প্রতিযোগিতা হয়েছিলো।
রিপাবলিকানদের মধ্যে নাগরিক সমাজে সবচেয় পছন্দের ছিলেন রকফেলার।তিনি ছিলেন তখনকার বিলিয়নিয়ার তেল ব্যবসায়ী জন ডেভিসন রকফেলার নাতি।মার্কিন রাজনীতিতে রকফেলার পরিবার যুক্ত ছিলো ১৯১০ এর দশকের সময় থেকেই।ডিভিসন রকফেলার ছিলেন নীতিগতভাবে পুরোপুরি রিপাবলিকান।বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবে মার্কিন রাজনীতিতে সে সময় ব্যপক ক্ষমতাধর ছিল তার পরিবার।অন্ততপক্ষে উত্তরাঞ্চলে মোট ভোটের অর্ধেকের অনেক বেশি পড়ত রিপাবলিকানদের বাক্সে।কারণ রকফেলার পরিবারের কল্যাণে সেখানকার সাধারণ মানুষ কর্মসংস্থান পেয়েছিল।
কিন্তু তখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি মনোনয়নের ব্যপারে।কারণ রিচার্ড নিক্সন আরো একবার প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করছিলেন তখনও।রিপাবলিকানদের উপর মহলের এই নেতা নিজেকে বেশ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করাতে পেরেছিলেন।১৯৬০ এর নিবার্চনে পরাজয়ের পর তিনি যতটুকু পিছিয়ে গিয়েছিলেন,ঠিক ততটুকুই সামনে এগিয়ে আসেন ১৯৬৬ সালের নির্বাচনে।মূলত সেবার রিপাবলিকান কংগ্রেস প্রার্থীদের সপক্ষে প্রচারণা করেছিলেন নিক্সন যা তার অবস্থান ও ভাগ্য দুটোই বদলে দেয়।তবে এই দুজনের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন মিশিগানের গভর্নর এবং অটোমোবাইল ব্যবসায়ী জর্জ রমনিস।তিনি রিপাবলিকান হলেও আদর্শিকভাবে ছিলেন একজন কনজারভেটিভ মানুষ।
প্রার্থি হিসেবে ম্যাকার্থির উত্থানের গল্প
কম্যুনিজমের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয়ের নামটি খুব দৃঢ়ভাবে যুক্ত নয়।এর কৃতিত্ব অবশ্যই ক্যাথলিক শিক্ষক এবং সিনেটর মিঃ জোসেফ ম্যাকার্থির।রাজনৈতিক জিবনে তার কাজের জন্য সুখ্যাতি-কুখ্যাতি উভয়ই অর্জন করেছিলেন।মিনেসোটা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি মার্কিন রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন ১৯৪৮ সালে।সেইবার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নিযুক্ত হন।কংগ্রেসে তিনি সুপরিচিত ছিলেন শ্রমপন্থী উদার প্রকৃতির রাজনীতিবিদ হিসেবে।১৯৫৮ সালে তিনি সিনেটর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয় লাভও করেন।আনুষ্ঠানিক ভাবে মার্কিন রাজনীতিতে ম্যাকার্থি যুগের সূচনা ঘটে এই জয় লাভের মাধ্যমে।এরপর তিনি একে একে কাজ করেন জন এফ.কেনেডি এবং লিন্ডন জনসন প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে কম্যুনিজমের ডে আদর্শ প্রবেশ করেছিল তা শক্তহাতে দমন করেন ম্যাকার্থি।আসলে কম্যূনিজমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণেই তিনি মার্কিনদের মাঝে কুখ্যাতি লাভ করেন।এরপর তিনি ১৯৬৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।কিন্তু তরুন প্রজন্মের নিকট তার গ্রহনযগ্যতা ছিলো একেবারে শূণ্য।কিন্তু অন্য যেকোনো দলের যেকোনো প্রার্থীর থেকে তিনি ছিলেন বেশি সামর্থ্যপূর্ণ। অংশগ্রহনের প্রথম ধাপ হিসেবে ১৯৬৭ সালের মার্চ মাসে নিউ হ্যাম্পশায়ারে ক্যাম্পেইন করেন ম্যাকার্থি।কলেজের ছাত্ররা তার পক্ষে প্রচারণা চালায় এবং ম্যাকার্থি সেখানে বক্তৃতা দেন।যদিও তিনি তার বক্তৃতাতে বরাবরই আক্রমণত্মক ছিলেন এবং প্রচন্ড রকম রিপাবলিকানদের বিরোধী কথাবার্তা ম্যাকার্থি বলতেন।
রবার্ট এফ.কেনেডির ঘোষনার বর্ণনা
ডেমোক্রেট মনোনয়ন দৌড় নি হ্যাম্পশায়ারের নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ৪৯ শতাংশ ভোটে এগিয়ে ছিলেন তখনকার প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন।যদিও ম্যাকার্থিকে যতটা পিছিয়ে আছেন বলে মনে করা হত ততটা পিছিয়ে তিনি ছিলেন না।ম্যাকার্থি পেয়েছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ভোট।মনোনয়ন দৌড়ে না থেকেও এই ভোটে সবার চেয়ে লালসার শিকার হন সিনেটের রবার্ট এফ.কেনেডি।এই ভোটাভুটির পর শুক্রবারে ক্যাপিটল হিলে এক সাংবাদ সম্মেলনের ডান দিয়েছিলেন রবার্ট এফ.কেনেডি।সেখানেই আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-এর জন্য ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করবেন বলে ঘোষণা দেন।
কেবলমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-এ প্রার্থীতা ঘোষনা করেই ক্ষান্ত হননি তখন রবার্ট কেনেডি।বরঞ্চ এগিয়ে থাকা প্রেসিডেন্ট লান্ডন জনসনের সমালচনা করেন তীব্র ভাবে।জনসন প্রশাসনের কার্যক্রমকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপর্যয়কর এবং বিভ্রান্তিকর বলেও উল্লেখ করেন রবার্ট কেনেডি।সেই সাথে তিনি এও জানান যে তিনি তিনটি প্রাইমারির ভোটাভুটিতে ম্যাকার্থির প্রতি সমর্থন দেবেন।এতে ডেমোক্রেট পার্টি বিব্রতকর অবস্থাতে পরে যায়।দল থেকে অভ্যান্তরীণ চাপের মুখে পরে রবার্ট কেনেডি পরবর্তীতে প্রেসিডেন্স জনসনের পক্ষে কথা বলার প্রতিশ্রুতি দেন।এর বিনিময়ে তিনি তাকে ডেমোক্রেট দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে হবে বলে দাবি করেন।
প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার
নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে জয়ের পর রবার্ট কেনেডি প্রার্থীতা ঘোষনা বিষয়টি প্রেসিডেন্ট জনসনের কার্যক্রমে তেমন প্রভাব ফেলেনি।কারণ তিনি তখনও ভিয়েতনামের যুদ্ধের দিকেই পুরোপুরি মনোযোগী ছিলেন।শুধু তিনিই নন,ভিয়েতনাম যুদ্ধো ঘিরে তখন পুরো হুয়াই হাউজ কর্মব্যস্ত ছিলো।অতঃপর,১৯৬৮ সালের ৩১ মার্চ তারিখে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি ভিয়েতনামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট কর্তৃক বোমা হামলা ঘটনাটি নিশ্চিত করেন।জনসন প্রথম ঘোষনার পরেই জানান তিনি ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।প্রথম তথ্যের থেকেও দ্বিতীয় তথ্যটি পুরো বিশ্বকে মোটামুটি নাড়া দিয়েছিলো।
জনসনের এমন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পরদিনের সংবাদ পত্রে বিখ্যাত সাংবাদিক ওয়াল্টার ক্রোনাকাইট লিখেছিলেন।তার ভাষ্যমতে,প্রেসিডেন্ট জনসন বুঝতে পেরেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহন-ভিয়েতনাম যুদ্ধে অযৌক্তিক ছিলো।যার ফলে তার প্রশানের অনুমতিক্রমে ঘটে যাওয়া বোমা হামলার দায় সম্পূর্ণ নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জনসন।আসলে,এখানে ওয়াল্টার ক্রোনকাইন ছিলেন একজন মূলধারার মার্কিন মতবাদের প্রতিনিধি।
ততদিনে জনসন এবং কেনেডির ভিতরের মতপার্থক্য, বিদ্বিষ জন-সাধারণের সম্মূখে এসে পড়ে।আর এরই মধ্যে ভিয়েতনামের বোমা হামলার ঘটনার মার্কিন নাগরিকদের কাছে জনসনের গ্রহনযগ্যতা হ্রাস পেতে শুরু করে।এমন অবস্থায় প্রচারণায় গেলে ক্যালিফোর্নিয়া ও ওরেগোনে বেশ ভালো জনসমর্থন পান রবার্ট কেনেডি।বয়সে ছোট ও প্রফুল্ল কেনেডির জনসমর্থন প্রেসিডেন্ট জনসনের মনে একটু হলেও নাড়া দিয়েছিলো।কারণ,ততদিনে শারীরিক ভাবে অনেকখানিই ভেঙ্গে পরেছিলেন তিনি।জনসনের পরিবারের সদস্যরা চেয়েছিলেন জনসন যেনো রাজনৈতিক জীবন থেকে ইস্তফা দেন।পোপন সংবাদের ভিত্তিতর এমন গুঞ্জনও তখন রটে সেবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
হত্যাযজ্ঞের মৌসুম


একদিকে চলছিল ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ভোটাভুটি,আরেক দিকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত মানুষেরা নানা ভাবে নিজেদের অধিকার সমূহ প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।প্রেসিডেন্ট জনসন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না এই ঘোষণা দেবার পর এক সপ্তাহের মাথাই মার্কিন যুক্তরাষ্টে আবারও ছড়িয়ে পরে দাঙ্গা।দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ নেতা,মার্টিন লুথার কিং ঐ সপ্তাহে টেনেসিতে এক হোটেলে ছিলেন।৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় তিনি পায়চারী করছিলেন হোটেলের ব্যালকনিতে।এমন সময় একজন বন্দুকধারী গুলি তার দিকে গুলি ছুড়লে,সেই গুলিতে নিহত হন মার্টিন লুথার কিং।
দেশের এমন খারাপ সময় মার্টিন লুথার কিং-এর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা।নিউ ইয়র্ক,ওয়াশিংটনসহ বেশ কিছু বড় শহরেও শুরু হয় আন্দোলন।দাঙ্গার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটে ব্যপাক ভাবে।যদিও ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ভোটাভুটির কার্য়ক্রম বন্ধ থাকেনি।এর পরবর্তী দু মাসে ক্যালফোর্নিয়াসহ কয়েকটি প্রাইমারিতে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।যদিও প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাকার্থির ৬ প্রাইমারির বিপরীতে রবার্ট কেনেডি জয়ী হয়েছিলেন ৪টি প্রাইমারিতে।
১৯৬৮ সালের ৪জুন ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারিতে জয়ী হন রবার্ট কেনেডি।সেদিন রাতে তিনি তার সমর্থকদের সাথে বিজয় উদযাপন করে হোটেলে।হোটেল থেকে বের হবার সময় একজন বন্দুকধারী তাকে নিয়ে যায় হোটেলের রান্নাঘরে।ধ্বস্তাধস্তি হয় দুজনের মধ্যে,একপর্যায়ে মাথার ঠিক পিছনে গুলিবিদ্ধো হন রবার্ট কেনেডি।গুলিবিদ্ধো হওবার পরও ২৫ ঘন্টা বেচে ছিলেন রবার্ট কেনেডি।তার মৃত্যুর পর তার মৃত্যদেহ নিউ ইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হয় তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য।সেখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয় তার ভাই,সাবেক প্রেসিডেন্ট জনএফ.কেনেডির পাশে।ওয়াশিংটনের আর্লিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রিতে সেদিন সমাগত হয়েছিলো হাজার হাজার মানুষের।এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জনয় আনুষ্ঠানিক ভাবে রবার্ট কেনেডি ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন দৌড় থেকে বাদ পরেন।
মার্কিন সাংবাদিকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-এর জন্য ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার শেষ হয় রবার্ট কেনেডির হত্যার মধ্য দিয়ে।শোকগ্রস্ত ডেমোক্রেট নেতারা তখন আর রাজি হননি প্রাইমারাগুলোর জনপ্রিয়তা বা ফলাফলের উপর নির্ভর করতে।বরঞ্চ মনোনয়ন প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় পার্টির উপরমহল থেকে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনএ মনোনয়ন বঞ্চিত হন-কম্যুনিস্টদের বিরুদ্ধে সর্বদা আক্রমনাত্মক বক্তৃতা দেওয়া ম্যাকার্থি।হুবার্ট হামফ্রেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের পক্ষ থেকে।অনানুষ্ঠানিক ভাবে পতন ঘটে জন এফ.কেনেডি এবং জনসন প্রশাসনের হয়ে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করা ম্যাকার্থির।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,মার্কিন রাজনীতির স্বার্থে তার লাগাম টেনে ধরা দরকার ছিলো।
তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বীর আবির্ভাব ঘটা
ততদিনে রিপাবলিক দলে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে ফেলে।পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়ন পান সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।এছাড়াও তিনি তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন স্পিরো অ্যাগ্নিওকে।স্পিরো তখন নিজের জন্মস্থান মেরিল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।অন্যদিকে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত হুবার্ট হামফ্রে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন এডমুন্ড মুস্কিকে।এডমুন্ড মুস্কি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্টের সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট।কিন্তু এখানে শেষ হয়নি তখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা।ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিসেবে একজন ডেমোক্রেট পার্টির গভর্নরের আবির্ভাব ঘটে।
জর্জ ওয়ালেস ছিলেন একজন আলবামার গর্ভনর।যদিও তিনি এর ৫ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি পেয়েছিলেন।শ্বেতাঙ্গ এই নেতা কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের উপর বিরুদ্ধাচরণ করে থাকতেন।তিনি আলবামা ইউনিভার্সিটিতে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্রদের সীমিতকরণ করেন।এজন্য তিনি কুখ্যাতি অর্জন করেন।আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ঢাল হিসেবে তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলন এবং কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন শুরু করেন।তার পক্ষ নেয় দক্ষিণাঞ্চলীয় শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত রাজ্য সমূহ।ইন্ডিপেন্ডেট হিসেবে মনোনয়ন নিয়ে জর্জ ওয়ালেস তার রানিংমেট হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাবেক বিমান বাহিনীর কমান্ডার কার্টিস লেমায়কে।কমান্ডার কার্টিস লেমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেের সময় জামার্ন বাহিনীর উপর বিমান হামলাই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।এছাড়াও তিনি জাপানে পারমানবিক বোমা হামলায় সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম।