

জীবন নিয়ে নতুন ভাবে ভাবাবে যে সিনেমা-সোল
পৃথিবীতে আশার জন্য,একটি উদ্দেশ্য থাকে প্রতিটি মানুষের জীবনে।এই উদ্দেশ্য পূর্ণ করা বা করতে পারাটাই কি জিবনের একমাত্র সার্থকতা,না কি আরো বড় কোনো মানে আছে জিবনের?এই বিষয়কে ঘিরেই একের পর এক কাহিনী সাজানো হয়েছে সোল (soul) নামের এ্যনিমেশন সিনেমায়।সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে মার্কিন ঘরোনায় এবং তাদের সংস্কৃতিকে মাথাতে রেখে,কিন্তু সোল সিনেমার বিভিন্ন পর্যায়ে জীবন নিয়ে যে ভুল ধারণাগুলো দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে,এর সবগুলোই হয়তো আপনি আপনার নিজের জিবনেই আবিষ্কার করতে পারবেন এবং সিনেমার একদম শেষে জীবন নিয়ে আপনার ধারণাটা কিছুটা হলেও বদল আসবে।নিজেকে মনে হবে আপনি আরও বেশি খুশি মানুষ
গল্পটা শুরু এক পিয়ানিস্ট,জো গার্ডনারের জীবন থেকে।সারাটা জিবন জ্যাজ সঙ্গীতের প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করা জো সব সময় চেয়েছেন,ডর্থি উইলিয়ামসের সাথে তার জ্যাজ ক্লাবে তার সাথে কাজ করার।কিন্তু,পরিবার থেকে তার প্রতি যে প্রত্যাশা ছিলো তা এখানে একটি বাঁধা হয়ে দাড়ায়।জো-এর মা সব সময় চাইতেন তিনি এমন একটা চাকরি করুন যেখানে চাকরি ও জিবনের নিরাপত্তা, মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স, পেনশন ইত্যাদি সুবিধা বা নিশ্চয়তাগুলো থাকবে।জোর মা ভাবতের জো’র নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে গেলে ভালো ক্যারিয়ার পাওয়া যাবে না।সোল সিনেমার এই জায়গাটি আমাদের অনেকের জিবনের সাথেই মিল পাওয়া যাবে।
আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে খুব সম্মানজনক অবস্থান এবং খুব ভালো বেতনের চাকরির চিন্তা ছাড়া অন্য চিন্তা করাই যেন লখন অন্যায়ের কাজ।তা-ও কেউ যদি নিজের সপ্ন বাঁচিয়ে রেখেও একটা চাকরির কথা ভাবে,সেখানেও আসে সরকারী চাকরির কিছু বিশেষ বিষয় নিয়ে অস্বাস্থ্যকর এক প্রতিযোগিতা।কেউ যদি লেখক কিংবা গায়ক হতে চায়,আমাদের পরিবার বা সমাজে এধরণের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই।
এমনটাই ঘটতে যায় জো-এর নিজের জীবনেও।তবে মায়ের ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও জো যখন ডোর্থির সাথে পারফর্ম করা সিদ্ধান্ত নেয়,তখনই আসে গল্প টার আসল মোড়।
মানুষ মৃত্যুর পরে কোথায় চলে যায়?এ নিয়ে বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও সোল মুভিতে দেখানো হয় এক ভিন্ন যগতের বর্ণনা।হঠ্যাৎ করেই এক দূর্ঘটনাই জো’র মৃত্যু হলে তাকে পাঠানো হয় মৃত্যুর পরের জীবন “দ্যা গ্রেট বিয়ন্ড”-এ,কিন্তু জো তার পৃথিবীর জিবনর আবার ফিরে আসতে চায়।কারণ,সে মনে করে তার জিবনের একমাত্র লক্ষ ডোর্থির সাথর এক মঞ্চে পারফর্ম করা বাকি রেখে সে কিছুতেই পৃথিবী থেকে চলে যেতে পারে না।এরই ঘটনাক্রমে সে চলে আসে “দ্যা গ্রেট আফটার লাইফ” বা ইউসেমিনার নামে এক স্থানে।
“ইউসেমিনার” এমন এক জায়গা,যেখান জন্ম হবার আগে প্রত্যেক আত্মাকে আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্বের শিক্ষা দেওয়া হয় এবং পৃথিবী থেকে গত হওয়া সফল ব্যক্তির আত্মাকে এই নতুন আত্মাদের মেন্টর হিসাবে নিযুক্ত করা হয়।বলে রাখা ভালো যে,জো তার নিজের জীবনে খুব একটা সফল না হলেও ভুলক্রমে ইউসেমিনারে চলে আসে এবং সবাই তাকে মেন্টর ভাবতে শুরু করে।
ইউসেমিনার জো-র উপর দ্বায়িক্ত পড়ে সোল-২২ নামের এক আত্মাকে মেন্টরিং করে পৃথিবীতে পাঠানোর জন্য উপযোগী করে তোলার।জোকে আসলে “সোল ২২”-এর আসলে তার জীবনের স্পার্ক খুজে বের করতে হবে।স্পার্ক হলো কি কাজ একজন মানুষ ভালো করতে পারবেন বা কি কাজ করে মানুষ পৃথিবীতে উন্নতি করতে পারবে,সে বিষয়।ঠিক যেমন জো-এর জন্য পিয়ানো স্পার্ক বলা যেতে পারে পিয়ানো বাজানোকে,কিন্তু তার জিবনের উদ্দেশ্য শুধু এটাই নয়।
| “স্পার্ক কোনো আত্মার উদ্দেশ্য নয়!”


“সোল ২২”-এর জীবনের স্পার্ক খুঁজে পেতে এক সময় জো এসে পৌছে যান এক জগতে,যা ‘স্পেজ বিটুইন ফিজিকাল অ্যান্ড স্পিরিচুয়াল’ নামে পরিচিত।এটা এমন এক জায়গা, যেখানে-তখনই কেউ আসতে পারে যখন কেউ তার জীবনের কোনো একটি কাজে একনিষ্ঠভাবে নিমজ্জিত হবে।সোল মুভিতে একে বলা হয়েছে ‘ইন দ্যা জোন’।যখন একজন গায়ক তার গানের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে পারবে কিংবা একজ অভিনেতা যখন তার অভিনয়ের মাঝে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলতে পারবে তখনই কেবল তারা এমন জায়গাতে পৌঁছাতে পারে।আরেক টা ধরণের মানুষ আছে যারা এখানে পৌছাতে পারে।সোল মুভিতে তাদের বলা হয়েছে ‘লস্ট সোল’ বা হাড়িয়ে যাওয়া আত্মা।
|”হারিয়ে যাওয়া আত্মারা এই স্থানে অন্য সক্ল আত্মাদের থেকে খুব একটা আলদা কিছু নয়।এই জাইগাটি উপভোগ্য,তবে এই আনন্দ বা উপভোগ্যতা যখনই আচ্ছান্নতায় রুপ নিয়ে নেয়,তখনই তা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে আমাদের।
সোল মুভির এ পর্যায়ে বোঝা যাচ্ছে,কখনোই নিজের দুশ্চিন্তাকে বেড়ে উঠতে দেওয়া যাবে না।কিছু নিয়ে খুব বেশি আচ্ছন্ন হয়ে পরলে তা আমাদের জীবন থেকেই একসময় আমাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।বর্তমান প্রজন্মের জন্য এই ভাবনা খুবই বেশি জরুরী।কেননা,আমরা অনেক ক্ষেত্রেই খুব ছোটখাট বিষয়কে এত বেশি বগ করে দেখি যে নিজেদেরকে জীবনের ছন্দ উপভোগ করতে না দিয়ে নিজের অস্তিত্ব টাই হাড়িয়ে ফেলি,যা কোনো ভাবেই উচিৎ নয়।
সোল মুভিতে একটা সময় জো আর “সোল ২২”,দুজনই পৃথিবীতে চলে আসে আর বিচিত্র নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে তারা।জো তার একজন পরিচিত নাপিতকে একদম নতুন রুপে দেখে,ভেটেনার হওয়াই যার জিবনের লক্ষ্য ছিলো,কিন্তু তারপরেও সেই নাপিত তার বর্তমান কাজ নিয়ে ভিষণ খুশি এবং এমনকি ডোর্থি উইলিয়ামের সাথে পারফর্ম করার পরেও জো’র মনে হতে শুরু করে,তার জিবনের এটাই যদি একমাত্র লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে তার কেনো মনে হচ্ছে কি যেনো একটা নেই?আর পৃথিবীতে আসার আগে “সোল ২২”-এর পুরোপুরি একঘেয়ে লাগা পৃথিবীকে ভালো লাগতে শুরু করে।এখানেই সোল মুভির আসল বার্তাটি রয়েছে।”সোল ২২”-এর ভাষায়-মানুষের জিবনের স্পার্ক যেটাই হোক না কেনো,তার জীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে যে কোনো কিছু।
|”হয়তো হেঁটে বেড়ানো বা আকাশ দেখা আমার স্পার্ক হতে পারে।আমি খুব ভালো হাঁটতে পারি।


সত্যিই কত সুন্দর একটা ভাবনা।হাকুনা মাতাতা,যার মানে হচ্ছে,জীববনকে নিয়ে এত চিন্তা করা কিছু নেআ।জীবনের প্রত্যেক টা মুহূর্ত উপভোগ করাই হোক আমাদের সবার মূল উদ্দেশ্য।প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়েই তো মানু্ষের জিবন।জীবনে যখন কিছু একটা না পাওয়া থাকে,তার মানে এই নয় যে,এখানেই সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।বরং এরমানে,আরও বড় সুযোগ হয়তো অপেক্ষা করছে,যা জীবনকে করে তুলতে পারে আরো পরিপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর।এই জন্য মুভির শেষে জো গার্ডান বলেছিলো,
|”আমি আমার জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত বাঁচবো।”
২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর সোল মুভিটি মুক্তি পাওয়া আইএমডিবি রেটিং ৮.১।পারিবারিক কমেডি জনরার এই সিনেমাটি পুরো ১ঘন্টা এবং ৪৭ মিনিট জুড়েই রয়েছে জীবন নিয়ে বহু সুন্দর ভাবনার সমাহার।পিট ডক্টর এবং কেম্প পাওয়ার্সের পরিচালনায় নির্মিত অ্যানিমেশন মুভিটি দুটি অস্কারসহ আরো বেশ কিছু সম্মাননা ছিনিয়ে নিয়েছে মুক্তির ১বছরের মধ্যেই।